সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারনে মাগুরায় এধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘঠেছে। আমারা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে মৃত ধর্ধিত শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সব সময় ধর্ষিতা শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হুসাইন বলেন, ৮ বছরের শিশু ধর্ষন মৃত্যুর ঘটনায় তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে শিশু ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন। এ ঘটনার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে যুব সমাজ নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
জেলা গণকমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সম্পা বসু জানান, তারা শিশুটির মৃত্যুর ঘটায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন, সেই সাথে ধর্ষকের বিচার দাবিতে আন্দোলনে মাঠে থাকবেন। মাগুরা শহরের রিক্সা চালক আবদুর রহমান ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসি দাবি করে।
কী ঘটেছিল শিশুটির সঙ্গে
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিন আগে শিশুটি মাগুরা শহরে তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে বোনের কাছে বেড়াতে যায়। গত ৬ মার্চ বেলা ১১টার কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক নারী। পরে জানা যায় ওই নারী তার বোনের শাশুড়ি। এরপর খবর পেয়ে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিশুটির গলায় দাগ ও শরীরে বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় দেখতে পান। চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে পুলিশ জানায়, শিশুটির যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। অবস্থা ভালো নয় দেখে তখনি মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিনই সন্ধ্যায় তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটিকে ঢাকায় আনার পরপরই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, তার শারীরিক অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’। সাতই মার্চ রাত থেকে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে দেয়া হয়। শিশুটির চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ডও কাজ শুরু করে। পরে আট মার্চ তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন শিশুটির মা। এরপর পুলিশ শিশুটির বোনের স্বামী, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তোলার পর তাদের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেছেন, শিশুটিকে নিপীড়নের ঘটনার সাথে যারা জড়িত বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের চারজনকেই পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
‘এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না’
শিশুটিকে নিপীড়নের প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত সাতই মার্চ শুক্রবার সড়ক অবরোধ ও থানার সামনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। পরে আটই মার্চ রাতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেন। ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, মাগুরার এই ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হবে।
“বিশেষ ব্যবস্থায় আমরা আজই পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করা হয়ে গেছে। আশা করি আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাব। এরই মধ্যে ১২-১৩ জনের ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট নেয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হবে।
এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো নৈরাজ্য আমরা বরদাস্ত করব না বলেও উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। ধর্ষণ ও বলাৎকারের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার শেষ করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। আগামী রবিবারের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারির চেষ্টা করা হবে। এ সময় কেউ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে,” যুক্ত করেন তিনি।
Leave a Reply