দ্বিতীয় টেস্টেও বিজয় নিশান উড়িয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতলো তারা, দলটিকে প্রথমবারের মতো করলো হোয়াইটওয়াশও।
প্রথম দিন বৃষ্টির পেটে চলে যাওয়ায় সবাই হয়তো ম্যাচটির ভাগ্যে ড্র-ই দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে টস হওয়ার পর ম্যাচ যেভাবে এগোতে শুরু করে, ধারণা পাল্টাতে বেশি সময় লাগেনি। দ্বিতীয় দিন থেকে দাপট দেখানো শুরু করা বাংলাদেশ সেটা জারি রাখলো ফল না আসা পর্যন্ত। ব্যাট হাতে লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসানদের ইতিহাস রচনার পর আগুনে বোলিংয়ে রূপকথার পথ তৈরি করে দেন হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা।
জাকির হাসান, সাদমান ইসলামের ব্যাটে দারুণ শুরুর পর বাকি চারজন মিলে জয় তুলে নেওয়ার কাজটুকু সারেন। দ্বিতীয় টেস্টেও বিজয় নিশান উড়িয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে তারা। প্রথম টেস্ট জিতে এগিয়ে থাকা সফরকারীরা সিরিজ জিতলো ২-০ ব্যবধানে। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ, দলটিকে প্রথমবারের মতো করলো হোয়াইটওয়াশও। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ।
টেস্টে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার ও জিম্বাবুয়েকে একবার সিরিজের সব ম্যাচে হারায় তারা। বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো এই সাফল্য মিললো, এর আগে একবারই প্রতিপক্ষকে হোয়াইওয়াশ করে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২-০ ব্যবধানে জেতে তারা। পাকিস্তানকে হারিয়ে ১৫ বছর পর ভুলে যাওয়া সেই স্বাদ নিলো বাংলাদেশ।
বিদেশের মাটিতে ৩৪ সিরিজে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। আগের দুটি সিরিজ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ক্রিকেটের দীর্ঘতম এই ফরম্যাটে এক বা একাধিক ম্যাচের সিরিজ মিলিয়ে এ নিয়ে নম সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট পচথচলায় ১৪৪ ম্যাচে এটা তাদের ২১তম জয়, বিদেশের মাটিতে ৬৭ ম্যাচে অষ্টম জয়। এর আগে ঘরের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি করে টেস্ট জেতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডকে হারায় একবার করে। এবার পাকিস্তানকে টানা দুটি ম্যাচে হারালো সিরিজুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ।
বৃষ্টির পর কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে সুবিধা করতে পারেনি স্বাগতিকরা, অলআউট হয় ২৭৪ রানে। জবাবে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও সেঞ্চুরিয়ান লিটন কুমার দাস ও হাফ সেঞ্চুরি করা মিরাজের রেকর্ড জুটিতে ২৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্বার বোলিংয়ে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে গুটিয়ে দেন হাসান ও নাহিদ। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫। যা ৫৬ ওভারে ৪ উইকেটে পেরিয়ে যায় তারা। টেস্টে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সফল রান তাড়া।
লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ দিনে শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। সাদমানকে এক পাশে রেখে ওয়ানডে মেজাজে রান তুলতে থাকেন জাকির। তার ব্যাটে ৭ ওভারে ৪২ রান তোলে বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টির হানায় খেলা হয়নি, ৪৬ ওভার আগেই দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। শেষ দিনেও এ দুজনকে সাবলীল মনে হয়, যদিও জুটির পথ দীর্ঘ করতে পারেননি তারা। জাকিরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন পাকিস্তানের পেসার মীর হামজা। এই সিরিজে এটাই বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি।
হামজার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৯ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন জাকির। দলীয় ৭০ রানে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান। মিড অফে শান মাসুদের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার ৫১ বলে ২টি চারে ২৪ রান করেন। দুই ওপেনারকে হারালেও চাপে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। এখান থেকে দলের হাল ধরেন শান্ত ও মুমিনুল হক। তৃতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। শর্ট লেগে ধরা পড়ার আগে ৮২ বলে ৫টি চারে ৩৮ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিছুক্ষণ পর সাদমানের মতো হতাশা বাড়ান দারুণ করা মুমিনুল। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তোলেন তিনি, যা তালুবন্দি করতে বেগ পেতে হয়নি সাইম আইয়ুবকে। ৭১ বলে ৪টি চারে ৩৪ রান করেন জাতীয় দলের সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক। ৩২ রানের জুটি গড়ে বাকি পথ পাড়ি দেন মুমফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। মুশফিক ২২ ও সাকিব ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের হামজা, খুররাম, আবরার ও সালমান একটি করে উইকেট নেন।
Leave a Reply